একটি গল্প শুনেছিলাম। দাম্পত্য অশান্তির তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এক পিতা তার পুত্রকে ওসিয়াত করছিলেন—‘বাবা, আর যা-ই করো না কেন, জীবনে বিয়ে করবে না’। ছেলে বাবাকে বলেছিল, ‘জ্বি বাবা, আপনি একটুও দুশ্চিন্তা করবেন না, আপনার এই ওসিয়াত নিশ্চয়ই আমি আপনার নাতী-নাতনীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে যাব’।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, হিসাবরক্ষক—এমনকি কেরানি হওয়ার জন্যও কিছু-না-কিছু শেখানো হয়; কিন্তু স্বামী-স্ত্রী হওয়ার জন্য কোনো বিশেষ শিক্ষা নেই। অথচ আমরা আর যা কিছুই হই বা না হই, স্বামী-স্ত্রী হওয়ার আবশ্যকতা প্রায় শতভাগ।
দাম্পত্য জীবনকে মোটেই হাল্কাভাবে দেখলে চলবে না; কারণ আপনি চান কিংবা না চান : এটা আপনার প্রতিটি সকাল, প্রতিটি সন্ধ্যা, প্রতিটি রাতকে প্রভাবিত করবে। আপনার জীবনে সফলতা ব্যর্থতার গতিপথ নির্ধারণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে।
তাই এই জীবন যারা শুরু করেননি, তাদের যেমন এ বিষয়ে জ্ঞান প্রয়োজন, যারা জ্ঞানহীন পথ চলে অনেক দূর এসেছেন ঠিকই; কিন্তু পথ ক্লান্ত-শ্রান্ত করে ছেড়েছে; কিংবা যারা ক্লান্ত হননি, তবে ভবিষ্যতে হতেও চান না, তাদের সকলেরই প্রয়োজন। এমন সকলের জন্যই আমাদের এই বই ভালোবাসার চাদর।
Meher Afroz –
📔 বুক রিভিউ📗
বইঃ ভালোবাসার চাদর
পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে লব্ধ শিক্ষা আমাদের ‘বিয়ে’ প্রথার প্রতি সৃষ্টি করছে তীব্র অনিহা।তাছাড়া দেহপসারিণীদের বিপরীতে আজ পরিবার গুলোকে টিকিয়ে রাখা হয়ে উঠেছে চ্যালেঞ্জিং বিষয়। বিশেষত অমুসলিম / নামে মাত্র মুসলিমরা এদের কবলে পড়ে হারাচ্ছে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন। অনেকক্ষেত্রে প্যাক্টিসিং মুসলিমরা ‘বিবাহিত জীবন’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না রাখার কারণে ‘বিয়ের পরবর্তী সময়ে তিক্ত জীবন অতিবাহিত করছে।
বিয়ে করা মানেই অর্ধেক দ্বীন পালন করা। কিন্তু বিয়ে করে নিলেই অর্ধেক দ্বীন হাসিল হয়ে যায় না। বরং, আগে জানতে হবে বিয়ের সুফল কী, জীবন সঙ্গী নির্বাচনে কোন কোন বিষয় গুলো মাথায় রাখা জরুরি, বিয়ে প্রস্তাব আসলে কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করা উচিৎ এবং কোনটা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ, বিয়ের দেন মোহর কেমন হলে বিবাহিত জীবন শান্তিপূর্ণ হবে, বিয়ের অনুষ্ঠানই বা কেমন করে করা উচিৎ। বিবাহিত জীবনে স্বামী- স্ত্রীর কী কী দায়িত্ব পালন করতে হয় অর্থাৎ, এসব সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? তারপর, তা বাস্তবায়নের মাধম্যেই না দ্বীনের পূর্ণতা লাভ করা যাবে।
সিয়ান পাবলিকেশনের প্রকাশিত ‘ভালোবাসার চাদর’ তেমনই একটা বই। বইটিতে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে এবং বিবাহিত জীবনের অত্যাবশ্যক অনেক নিয়মকানুন উপস্থাপন করা হয়েছে।
বইটি যারা পড়বেন—
➤কয়েক বছরের ভেতর বিয়ে করতে যাচ্ছেন?
➤অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসছে কিন্তু কাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে সিলেক্ট করবেন সেই, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না?
➤ ইসলামি বিধান— আকদ, ওয়ালীমা, Intercourse সম্পর্কে তেমন কোনো আইডিয়া নেই বললেই চলে! তাহলে পড়ে ফেলুন বইটি।
➤তাছাড়া, যারা বিবাহিত জীবনে দুশ্চিন্তায় আছেন।একে অন্যের অধিকার সুনিশ্চিত করে গ্রীষ্মের দাবদাহের ভেতরও বসন্তের আগমন ঘটাতে চান তাদের জন্য বইটি আশাজাগানিয়া।
বই থেকে কিছু অংশঃ—
‘তিক্ততা যদি মধুরতার উপর জয়লাভ করে,
ভালো লাগার উপর যদি বিরক্ত প্রাধান্য বিস্তার করে,
মিলের চেয়ে অনীহা যদি প্রবল হয়,
তনে দাম্পত্য- সুখ বিদায় জানাবে।’
পৃষ্ঠা নং— ১৭.
‘বিয়ে কেবল বৈধ পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমই নয় বরং বিয়ে হলো নিজের আমলনামায় সৎকর্ম সঞ্চয়ের এক মাধ্যম।’
পৃষ্ঠা নং—২৭
‘নারীর সম্মতি ছাড়া তার থেকে মোহর নিয়ে নেওয়া কবিরাহ গুনাহ।’
পৃষ্ঠা নং— ৭১
‘ চোট পেলে, কাঁটা ফুটলে নবিজি [ স. ] প্রতিটি ক্ষেত্রে মেহেদি লাগাতেন।’
পৃষ্ঠা নং— ৮১
‘সম্মানজনক সদয় আচরণ পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। স্বামীর পক্ষ থেকে এটি কোনো ঐচ্ছিক অনুগ্রহ নয়; বরং স্বামীর এই আবশ্যিক কর্তব্য আসমানি নির্দেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত।’
পৃষ্ঠা নং— ৯২
‘এমন নারীকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ যে প্রকাশ্যে ব্যভিচারিণী কিংবা পতিতা বলে প্রতিষ্ঠিত।’
পৃষ্ঠা নং— ১৪৭
‘স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া অকৃতজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ। ’
পৃষ্ঠা নং—১৭১
‘ পরিবারের জন্য স্ত্রীর আচরণ হতে পারে সকলের সম্মান এবং মর্যাদার উৎস কিংবা কলঙ্কের কারণ।’
পৃষ্ঠা নং—১৮৫
পাঠ্যানুভূতিঃ—
এই বইটি’র প্রধান সম্পাদক আহমেদ রফিক’ ভাইয়ের কথন না পড়লে হয়ত জানাই হত না, দেহপসারিণীদের কাস্টমার ধরে রাখার জন্য এতো নৈপূন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এ কারণেই তো সমাজে কাঁচের গ্লাসের মত সংসারগুলো ভাঙছে।ঠুঙ্ক কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় বেড়েছে ক্রন্দনরোল ।
আজ যদি প্রতিটি পরিবার ইসলামের আইন অনুসরণ করে, দ্বীনদার জীবনসাথী নির্বাচন করত, নামে মাত্র দেনমোহর ধার্য করে বিয়েগুলো হতো।বিয়ে বাড়ীতে অশ্লিল গান- বাজনা আর গলাকাটা ভোজ-সভার আয়োজন না হতো তাহলে, পরিবার গুলোতে কতই না শান্তি বজায় থাকত। আফসোস।
বইটির একটি ভালো দিক হলো কুরআন- হাদিসের দলিলগুলো খুব সংক্ষিপ্ত এবং যেখানে যতটুকু প্রয়োজন সেখানে ঠিক ততটুকুই উপস্থাপন করা হয়েছে।
সূচিপত্রে সুন্দর করে প্রতিটি টপিকের নাম তুলে দেওয়ার ফলে যেকোনো সময়ে উক্ত টপিক খুলে রেফারেন্স বের করা সহজ।এবং এ বিষয়ে কারো সাথে রেফারেন্সসহ আলোচনা করা খুব সহজ হয়েছে।
বাজারে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন শ্রেণীর লেখকদের চটকদার বই আছে। যা কতটা উপকারী তা কেনার পর টের পাবেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে বিষয়ক মানসম্মত বইগুলোর ভেতর এটি একটি।
মন্তব্যঃ—
⊕ যেহেতু বিয়ে সম্পর্কিত বই। বিবাহ করতে যাচ্ছে বা বিয়ে হয়েছে এমন পাঠককে টার্গেট করে নির্মিত সেহেতু প্রচ্ছদের রঙ হালকা গোলাপি/ হালকা লাল দিলে দেখতে সুন্দর লাগত।
⊕ ৩বার পড়ার পরও তেমন কোনো অসংগতি চোখে ধরা পড়েনি। এক কথায় নিখুঁত একটি কাজ।মা শা আল্লাহ।
রিভিউ দাতাঃ Meher Afroz
Mahbuba Islam Disha –
পরিক্ষার হলে পরিক্ষা দিতে যাবেন, কিন্তু কোনো ধরণের প্রস্তুতি ছাড়াই!! এমন পাগলামি কেউ করে?
অবশ্যই না।
কিন্তু দুজন ভিন্ন দুটি মানুষ, ভিন্ন মন, ভিন্ন মতের হয়েও এক সাথে সারা টা জিবন চলবে একে অন্যের অর্ধাঙ্গ হয়ে, একি কম বড় পরিক্ষা? কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই পরিক্ষা দেওয়ার আগে প্রস্তুতি জিনিষ টা কেউ নেয় ই না বললে চলে।
এখন একটা বই সম্পর্কে বলি যেটা পড়লে পরিক্ষার হলে গিয়ে মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে থাকতে হবে না, ইনশাআল্লাহ।
ড. বিলাল ফিলিপস এবং মুস্তাফা আল-জিবালির “ভালোবাসার চাদর”।
এই ভালোবাসার চাদরের গায়ে যা যা লেখা থাকছে (অধ্যায় গুলোর নাম) তা হলো,
“কল্যাণময় বন্ধন, স্বামী-স্ত্রী নির্বাচন পর্ব, বিয়ের প্রস্তাব, আকদ অনুষ্ঠান, বিয়ের অনুষ্ঠান, এক সাথে পথচলা, বাসর রাত, স্ত্রী যখন একাধিক, ওয়ালীমা বা বৌভাত, নিষিদ্ধ বিয়ে, স্ত্রীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, স্ত্রীর অধিকার স্বামীর কর্তব্য, স্বামির অধিকার স্ত্রীর কর্তব্য, শেষ কথা”
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন জীবন শুরুর আগে যা যা জানার প্রয়োজন সব কিছু আছে এই বইতে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের আনুগত্যের মাধ্যমে একজন আদর্শ এবং সৎ কর্মশীল স্বামী-স্ত্রী
হওয়ার জন্য যা করনীয় সব কিছু পাবেন এই এক বইতে ইনশাআল্লাহ। এক কথায় চমৎকার একটা বই।
জড়িয়ে রাখুন নিজেদেরকে “ভালবাসার চাদরে”
বি.দ্র: “ভালোবাসার চাদর” বইটা কিন্তু শুধুমাত্র অবিবাহিতদের জন্য না, বিবাহিতদের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য।