তাকওয়া হচ্ছে মুমিনের সম্বল, আখিরাতের সফরের গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়। যার মাঝে তাকওয়া নেই, সে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারে না। কারণ, তাকওয়ার বদৌলতেই মানুষ ফুরকান (ভালো-মন্দের পার্থক্যকারী গুণ) লাভ করে। তাকওয়া বা আল্লাহভীতিই মানুষকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, আর ভালো কাজে উৎসাহী করে।
তাকওয়া মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য, পাথেয় লাভের পথ। তাকওয়া মানুষকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে, জাহান্নামের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাকওয়ার মাধ্যমেই অর্জিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি।
আমাদের এই বইটি তাকওয়ার মাহাত্ম নিয়েই। এই বইতে তাকওয়া নিয়ে তিন জন পূর্বসূরী ইমামের আলোচনা সংকলন করা হয়েছে। তাকওয়ার গুরুত্ব ও মাহাত্ম নিয়ে কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্য ও সালাফদের তাগিদ আলোচিত হয়েছে এতে। আমাদের পিপাসার্ত অন্তরে তাকওয়ার বীজ রোপণে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, ইন শা আল্লাহ।
Din Muhammad Sheikh –
জীবনের এ কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে দরকার সুদৃঢ় অবলম্বন। এ বিপদ, এ ফিতনা, এ অনাচার ও অত্যাচার — এসবের প্রতিকূলে দাঁড়াতে দরকার সুকঠিন পাথেয়। কী সেই পাথেয়? কী সেই অবলম্বন? আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদেরকে সে পাথেয়র সন্ধান দিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলছেন,
“তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। আর শ্রেষ্ঠ পাথেয় হলো তাকওয়া।” (সুরা বাকারা : ১৯৭)
জ্বি, তাকওয়াই জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাই এ সম্পদ অর্জনে আমাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিতে হবে, যা সম্ভব হবে এ সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে নাতিদীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে এ শ্রেষ্ঠ সম্পদ সম্পর্কে জানতে আমাদের জন্য বেশ উপকারী হবে সন্দীপন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই ‘তাকওয়া : মুমিনের সম্বল’।
বইটি মূলত তিনজন মহান ইমাম — ইমাম ইবনুল কায়্যিম, ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি, ইমাম গাজালি রহিমাহুমুল্লাহ-এর তাকওয়া-সম্পর্কিত রচনার সংকলন।
▪️ কী কী আছে বইটিতে?
বইটি শুরু হয়েছে তাকওয়ার পরিচয় প্রদানের মধ্য দিয়ে। কুরআন, হাদিস ও সালাফদের কিতাব থেকে প্রাসঙ্গিক দলিল উল্লেখ করে তাকওয়ার শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাকওয়া অর্জনের পথে সালাফরা কতটা উদগ্রীব ছিলেন, কতটা তাগিদ দিয়েছেন তারা এ সম্পদ অর্জনের জন্য — এ সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপনের পর বইটিতে বর্ণিত হয়েছে মুত্তাকিদের গুণাবলি নিয়ে দামি আলোচনা। বইয়ের এ অংশটুকু অত্যন্ত দামি। এ অংশ পড়ে একজন পাঠক মুত্তাকিদের গুণাবলি জানতে পারবেন, নিজের সাথে মিলিয়ে নিজেক সংশোধনও করে নিতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ। মোটকথা তাকওয়া ও মুত্তাকি নিয়েই বইটির আলোচনা আবর্তিত হবে, ইনশাআল্লাহ।
▪️ বইটির বৈশিষ্ট্য :
অসাধারণ একটি বই হবে ‘তাকওয়া : মুমিনের সম্বল’। প্রাসঙ্গিক-ধারাবাহিক আলোচনা, কুরআন, হাদিস ও সালাফদের থেকে দলিলপত্রের পর্যাপ্ততা, সরল ও সাবলীল অনুবাদ — এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে পাঠকমহলে বইটি বেশ জনপ্রিয়তা পাবে, ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া একই মলাটে তিন-তিনজন মহান ব্যক্তির রচনার স্বাদ আস্বাদন করার দারুণ একটি ব্যাপার নিশ্চয়ই।
তবে বইটি কি তিনজন ইমামের রচনার সংকলন? নাকি তাদের রচনাকে সামনে রেখে অনুলিখন? যদি তিনজন ইমামের রচনার সংকলন হয়, তাহলে বইয়ের কোন অংশটুকু কার লেখা? বইয়ের শুরুতে ইংরেজি অনুবাদ-সংকলক হিসেবে যার মুখবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে, সেখানে এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি পুরো বইয়ের কোথাও এ সম্পর্কে কিছু পাইনি।
প্রচ্ছদ খুব দারুণ। বাইন্ডিং ও পৃষ্ঠামান বেশ প্রশংসনীয়।
▪️ বইটির জরুরত :
বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে উপর্যুক্ত বইটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের মধ্যে আজ নেই তাকওয়ার গুণ। যার ফলে নফসের হাতে বন্দি হয়ে গেছি আমরা। নফসই আমাদের চালিত করছে। এমতাবস্থায় তাকওয়ার গুণই আমাদেরকে নফসের গোলামি থেকে মুক্তি দিয়ে রবের গোলামির প্রতি ধাবিত করতে পারে। তাছাড়া বর্তমান এ ক্রান্তিলগ্নে তাকওয়াই পারে বিজয়ের সোনালি সূর্য এনে দিতে। ইনশাআল্লাহ। তাই তাকওয়া সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন আমাদের অত্যন্ত জরুরি। আর সে প্রয়োজন পূরণে ‘তাকওয়া : মুমিনের সম্বল’ বইটি বেশ জরুরি।
▪️ একনজরে বইটি :
• বই : তাকওয়া : মুমিনের সম্বল
• লেখক : ইমাম ইবনুল কায়্যিম, ইমাম ইবনু রজব হাম্বলি, ইমাম গাজালি রহিমাহুমুল্লাহ
• অনুবাদক : আশিক আরমান নিলয়
• সম্পাদক : আহমাদ ইউসুফ শরীফ এবং জাকারিয়া মাসুদ
• প্রকাশনী : সন্দীপন প্রকাশন
• পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৬৪
• প্রচ্ছদমূল্য : ১০০/-
Amit Hasan –
■ বই- তাকওয়া: মুমিনের সম্বল
■ শুরুর কথা-
তাকওয়া মানে আল্লাহকে ভয় করা আর আল্লাহকে ভয় করলেই আমরা যেকোনো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারবো। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনে সফলতার দ্বার উন্মোচনে সাহায্য করবে।তাকওয়া হলো ইসলামের অন্যতম একটি ভিত্তি। যার ওপর নির্ভর করবে আমাদের সফলতার পথ। যে তাকওয়াবান তাকে বলা হয় মুত্তাকী। ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
■ বইটির আলোচ্য বিষয়-
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে তিনজন মহান ইমামের আলোচনা গুলোকে একত্রে সংকলন করা হয়েছে। মোট ৬ টি অধ্যায়ের সমন্বয়ে বইটিকে সুসজ্জিত করা হয়েছে। তাকওয়ার পরিচয়, তাকওয়া যে আসলেই মুমিনের সম্বল তা কুরআন, হাদিস ও সালাফদের কথনের মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে । যিনি অন্তরে তাকওয়া ধারণ করেন তার অনন্য গুণাবলী গুলো আলোচনা করা হয়েছে। পরকালীন জীবনে তাকওয়া কিভাবে আমাদের মুক্তির মাধ্যম হবে বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটিতে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাকওয়ার উপকারী দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
■ বইটি কেনো পড়া উচিত-
বইটি পাঠের মাধ্যমে একজন পাঠক বা পাঠিকা তাকওয়ার যাবতীয় পরিচয়, কুরআন হাদিসের আলোকে এর গুরুত্ব নিরূপণসহ সালাফদের অমিয় সুধা উপলব্ধি করে পরকালীন জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারবেন। সেই সাথে নিজেদের জীবনে মুত্তাকীর হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলিত করে তাকওয়ার উপকারি দিকগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করে মহান আল্লাহর গুণান্বিত বান্দা হওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। মূলত বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি আমাদের তাকওয়ার সাথে আরও গভীর ভাবে পরিচয় করে দেবে। তাকওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের অন্তরকে আরো সজাগ করবে আশা করা যায়।
■ বইটি কাদের জন্য-
তাকওয়া হলো একটি মহৎ গুণ। যে নিজেকে এই গুণে গুণান্বিত করতে সক্ষম হবে তার অন্তর হবে পরিশুদ্ধ। কারণ সে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত থাকবে। তার দ্বারা কোনো অপরাধ হতে পারে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যায় মুসলিম হয়েও অনেকের দ্বারা অনেক হারাম কাজ হয়ে যায়। এর কারণ অন্তরে তাকওয়ার অভাব। অর্থাৎ তারা সমুসলিম হয়েও তাদের অন্তরে তাকওয়ার বীজ বপণ করতে পারেনি। এরূপ সকল মুসলিমের জন্য বইটি কার্যকরী হবে আশা করি। এছাড়া প্রত্যেকটি মুসলিমের বইটি পাঠ করা উচিত যাতে করে তারা তাদের অন্তরে আল্লাহ ভীতি অর্থাৎ তাকওয়াকে আরো মজবুত তথা শক্তিশালী করতে পারে।