সুলতান আবদুল হামিদ বইটি ইতিহাসের এমন এক দিকপাল মহান সুলতানের গল্প, যিনি ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ খলিফা। দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় (১৮৭৬-১৯০৯) শাসনকার্য পরিচালনা করেন যিনি।
সুলতান আবদুল হামিদ এমন এক মহান নেতা, যিনি ইউরোপীয় শক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন। প্রতিবাদে বলেছিলেন, ‘মহান আল্লাহই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের জন্য যথেষ্ট।’
পাঠক এ বইটি থেকে জানতে পারবেন সেই সুলতানের জীবনচরিত, যিনি সেই প্রযুক্তি-পূর্ব পৃথিবীতে মানুষের মাঝে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়ে, অসংখ্য বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করে, মক্কা শহরকে বন্যা থেকে রক্ষার জন্য আধুনিক পানি সঞ্চালন পদ্ধতি চালু করে, ইস্তাম্বুল, ফিলিস্তিন ও মদিনা শহরকে সংযুক্ত করে ‘হিজাজ রেল-লাইন’ চালু করে আজও গোটা পৃথিবীর বিস্ময় হয়ে আছেন। তিনি তার সমসাময়কি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার জন্য প্রশংসিত ছিলেন।
সুলতান আবদুল হামিদ। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ। তার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীকে প্রায় সাড়ে ১৩০০ বছর শাসন করা খিলাফত পতনের ইতিহাস। সুতরাং এমন দীকপাল সুলতান সম্পর্কে জানতেই সুলতান আবদুল হামিদ বইটি।
আব্দুর রহমান –
সুলতান আব্দুল হামিদ
অটোম্যান সম্রাজ্য ইসলামের ইতিহাসের এক স্বরনীয় নাম। আর অটোম্যান সম্রাজ্যের একজন অন্যতম শাসক হলেন সুলতান “সুলতান আব্দুল হামিদ”। যার উপর ভিত্তি করেই মুহাম্মদ পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে মুহাম্মদ পাবলিকেশন প্রকাশ করেছে “সুলতান আব্দুল হামিদ” বইটি। বইটির মূল লেখক ড: আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি। যিনি জন্মগ্রহন করেন লিবিয়ার রাজধানী বেনগাজিতে। তিনি একাধারে লেখক, গবেষক, ইসলামি ইতিহাসবিদ ও প্রখ্যাত ফকীহ আলেম। প্রণয়ন করেছে বহু ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা তিরিশেরও অধিক। সবগুলো কিতাব মুসলিম বিশ্বে খুব জনপ্রিয়।
বইটি অনুবাদ করেছেন বিজ্ঞ লেখক ও অনুবাদক কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক।
.
➤ মূল আলোচনাঃ-
বইটিকে লেখক আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী সাতটি পরিচ্ছেদ এ বিভক্ত করে আলোচনা করেছেন।
তার মধ্যে প্রথম ছয়টি পরিচ্ছেদের আলোচনা আবর্তিত হয়েছে সুলতান আব্দুল হামিদকে ঘিরে। সুলতান আব্দুল হামিদ ছিলেন উসমানী সাম্রাজ্যের ৩৪ তম সুলতান। যিনি ছিলেন উসমানীয় বা অটোম্যান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সুলতান। তিনি ছিলেন একজন সাহসী, ধার্মিক, বিচক্ষণ ও ন্যায়পরায়ণ একজন শাসক। ১৮৭৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
তার গুণগুলোর মধ্যে মেধা, সহনশীলতা, বীরত্ব, বিচক্ষণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সাহসী যোদ্ধা, দৃঢ় মনোবল ইত্যাদি ছিল অন্যতম।
সুলতান আব্দুল হামিদের সময়কালে শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যপক উন্নতি সাধিত হয়।
এত শক্তিমান একজন শাসক হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারনে শেষ পর্যন্ত শাসনক্ষমতা চলে যায় ইহুদি ও পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বারা সমর্থিত “জমিয়তুল ইত্তিহাদ ওয়াততারিক্কি” এর হাতে।
এছাড়াও বইয়ের শেষে অর্থাৎ সপ্তম পরিচ্ছেদে শক্তিশালী উসমানী সাম্রেজ্যের পতনের পেছনে দায়ী এমন দশটি কারণের কথা লেখক উল্লেখ করেছেন।
.
➤ বইটি কেন পড়বেনঃ-
১। আপনি যদি কোন নির্ভরঘোগ্য উৎস থেকে ইসলামের ইতিহাস জানতে চান তবে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
২। আপনি যদি সুলতানের ক্ষমতা, বীরত্ব, রণকৌশল ও নেতৃত্বগুন সম্পর্কে জানতে চান তবে বইটি আপনার জন্যই।
৩। আপনি যদি ইসলামের একজন বীর মুজাহিদের জীবনী পড়তে চান এবং সেই সাথে শক্তিশালী অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
.
➤ ব্যক্তিগত অনুভূতি:-
বইটির কভার, প্রচ্ছদ, বাইন্ডিং, ও ভিতরের পাতা মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। লেখক ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি মুহাম্মদ আল ফাতিহ বইটিকে নির্ভরযোগ্য তত্ত্ব ও তথ্যের আলোকে সুনিপুনভাবে সাজিয়েছেন। অনুবাদ ও সম্পাদনাও খুবই চমৎকার হয়েছে। লেখা পড়তে গিয়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি যে অনুবাদ পড়ছি। বরং যথেষ্ট সহজ ও সাবলীল, ও বোধগম্য ভাষায় রচিত রচিত বলে মনে হয়েছে। সলতান আব্দুল হামিদ এর সংগ্রাম মুখর জীবন, ইতিহাস, ও কর্মপন্থার কথাই বর্ণিত হয়েছে বই জুড়ে। যেসব পাঠকের মুসলিম সমাজের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই তাদের জানার ক্ষেত্রে বইটি খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করি।
কারন এটা শুধু ইতিহাসের বই না এর সাথে মিশে আছে মুসলমানদের সোনালী অতীত।
তাই এ জাতীয় গ্রন্থ ইসলামী মনোভাবাপন্ন সকলের জন্য একবার হলেও পড়া উচিৎ।