কেউ কুরআন পড়ে, কেউ অধ্যয়ন করে। দুইটা কিন্তু সমান নয়। কুরআন শুধু পড়েই শেষ নয় বরং জরুরী হলো এটা বোঝা এবং নিজের জীববে প্রয়োগ করা। আর এই পথে অন্যতম উপকারী মাধ্যম হলো শব্দে শব্দে আল কুরআন। বিদেশী বিভিন্ন ভাষায় বিশেষ করে ইংরেজীতে শব্দে শব্দে পরিপূর্ণ কুরআনের অনেকগুলো ভার্সন থাকলেও বাংলায় সেভাবে নেই বললেও চলে। সেক্ষেত্রে মতিউর রহমান খান অনূদিত ১০ খন্ডের শব্দার্থে আল কুরআনুল মাজীদ এক অনবদ্য মেহনত। বাংলা ভাষাভাষী কুরআন অধ্যয়নকারীদের জন্য অপরিহার্য বলা চলে।
Copyright © 2024 Seanpublication.com
Mahbubul Islam Borshon –
১০ খন্ডের এ কাজটি সম্পূর্ণ করতে লেখকের প্রায় ১৪ বছর লেগেছে! জি ১৪ বছর। এ কাজটি করতে গিয়ে লেখক যে সব তাফসীর ও তর্জমার সহযোগিতা নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে মিশরের প্রখ্যাত মুফাসসির মুফতী হাসানাইন মাখলুফের কালিমাতুল কোরআন, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, সাফাওয়াতুত তাফসীর, মারেফুল কোরআন, তাফসীরে আশরাফী, শায়খুল হিন্দ হযরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানীর তাফসীর ও তর্জমায়ে কুরআন। তবে এই বইয়ের প্রধান যে বৈশিষ্ট অর্থাৎ কুরআনের প্রত্যেকটি শব্দের নীচে নীচে অর্থ দিয়ে যাওয়া, কুরআনের এই শাব্দিক তর্জমা করার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছেন মাওলানা শাহ রফিউদ্দিন সাহেবের উর্দু শাব্দিক তর্জমা পড়ে। এই বইয়ের মূল অবলম্বন এই বিখ্যাত শাব্দিক তর্জমা। এছাড়া মক্কা শরীফের উম্মুল ক্কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক ডঃ আব্দুল্লাহ আব্বাস নদভীর Vocabulary of the holy Quran, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুহসীন খানের Interpretation of the meanings of the Noble Quran, অধ্যাপক ইউসুফ আলীর The Quran,Translation and commentary থেকেও সাহায্য নিয়েছেন।
তবে শাব্দিক তর্জমা দ্বারা অনেক সময় পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর মূল বক্তব্য অনুধাবন সম্ভব নয়। তাই লেখক শব্দার্থের সাথে তর্জমায়ে কুরআন হতে সূরার নামকরণ, শানে নুযূল, বিষয়বস্তু, ভাবার্থ ও টিকা সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
বইটি পড়ার সময় কিছু কথা মাথায় রাখা দরকার। শব্দার্থ থেকে ভাবার্থ অনুধাবনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। লেখক কিছু বিষয় ভূমিকায় তুলে ধরেছেন। যেমন- কোন কোন শব্দের এক জায়গায় এক অর্থ,অন্য জায়গায় অন্য অর্থ করা হয়েছে। স্থান ও প্রসংগ ভেদে অর্থের এ বিভিন্নতা হতে পারে। অনেক সময় ঐ শব্দের আগে বা পরে কিছু সহকারী শব্দ আসার কারণেও এ পরিবর্তন আসতে পারে।
কোন কোন আরবী শব্দের নীচে আদৌ কোন বাংলা অর্থ নেই। অনেক সময় এ ধরণের শব্দ, বাক্য গঠনের পূর্বে ব্যবহার করা হয়, এর কোন পৃথক অর্থ থাকে না। পুরো বাক্যের উপরই এর অর্থ প্রকাশ পায়।
যে সব ক্ষেত্রে দুইটি আরবী শব্দ মিলে একটা বাংলা শব্দ হয়েছে, সেখানে আরবী শব্দ দুটির নীচে মাঝখানে বাংলা প্রতিশব্দটি সেট করা হয়েছে। কোন কোন শব্দের নীচে আগে পরে বাংলা শব্দ দেয়ার পর বন্ধনীর মধ্যে আরও কিছু শব্দ যোগ করা হয়েছে, যাতে অর্থটি আরও পরিষ্কার হয়ে যায়।
কুরআনে আখিরাতের বিশেষ বিশেষ ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে অতীত কাল ব্যবহার করা হয়েছে-এগুলো এমন, যেন ঘটনাটি ঘটেই গিয়েছে। এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এভাবে আখিরাতে, ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কিছু কিছু বিষয়ে পবিত্র কুরআনে ক্রিয়ার অতীত কাল ব্যবহার হলেও তর্জমায় ভবিষ্যত কাল ব্যবহার করা হয়েছে। মোট কথা হলো, শব্দার্থের সাথে সাথে এর মর্মার্থ অবশ্যই পড়তে হবে।
বাংলা ভাষায় এ ধরণের বই এটাই প্রথম ছিলো আমার জানা মতে। বর্তমানে সিয়ানের মহিমান্বিত কুরআন এই বিষয়ে আরেকটি চমৎকার সংযোজন। কুরআনের শব্দার্থ জানার জন্য অনেক বই থাকলেও এরকম আয়াতের নীচে নীচে প্রত্যেকটি শব্দের নীচে নীচে অর্থ দেয়া বই এই দুটোই রয়েছে আমার জানা মতে।
বইটা থেকে যে আমি কি পরিমান উপকৃত হয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। বাংলা ভাষায় এ ধরণের একটা কাজ খুব প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে যারা আরবী শিখছেন তাদের জন্য বইটা আরো বেশি উপকারী।
আল্লাহর নামে তাহলে শুরু করে দিন। বিশ্বাস করুন কুরআন আপনাকে এমন কিছু দেবে যা আপনি আগে কখনো পাননি।
আল্লাহর রাসূলের একটা দু’আ দিয়ে শেষ করি।
হে আল্লাহ!… আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী।
[আহমাদ ১/৩৯১, নং ৩৭১২]