ইসলামি ঘরানায় বর্তমানে ছোটগল্প বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই অনেক লেখকই দাওয়াহর জন্য এটিকেই বেছে নিচ্ছেন। ছোট গল্প যেহেতু দশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়, তাই পাঠকরা সাধারণত বিরক্ত হয় না। তাছাড়া গল্পে গল্পে পাঠকের বোধবিশ্বাসে সহজেই রেখাপাত করা সম্ভব হয়। যাক, ছোটগল্প নিয়ে একদিন আলাদা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
‘স্বাগত তোমায় আলোর ভুবনে’ এর গল্পগুলো পুরোপুরি রবিবাবুদের ছোটগল্পের সংজ্ঞায় পড়ে না। এগুলো অনেকটা বিভূতিভূষণ ও বনফুলের ছোটগল্পগুলোর মতো। গল্পকে রোমাঞ্চকর কোনো পরিণতি দেয়ার চেয়ে গল্পের মূল মেসেজটা পাঠকের হৃদয়ে চারিয়ে দেয়ার চিন্তাই এখানে লেখককে তাড়িত করেছে।
শাইখ আব্দুল মালিক আল কাসিমের রচনা যারা পড়েন তাদের অজানা নয় যে, তার প্রায় সব রচনার সারনির্যাস হলো দাওয়াহ ও আত্মশুদ্ধি। আশির দশকে লেখা ‘আজ-জামানুল কাদিম’গল্প গ্রন্থটি তার রচনাবলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়। তার দায়িসুলভ প্রতিভার পূর্ণ স্ফূরণ ঘটেছে এই গল্পগুলোতে। মৃত্যু, কবর, তাওবা, সাদাকা, দাওয়াহ, সদাচার, তিলাওয়াত, মুহাসাবা, হিজাব ইত্যাদির মতো মুমিনের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলোকে উপজীব্য করে তিনি গল্পগুলো নির্মাণ করেছেন।
গ্রন্থটি রচনা করতে গিয়ে মনে হয় তিনি মেয়েদের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রেখেছেন। অধিকাংশ গল্পেই তিনি মেয়েদের বিভিন্ন দ্বীনি বিষয়গুলোকে দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। নারীদের পর্দা, দাওয়াত ও ইবাদতসহ দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিশুদ্ধ ভাবনা উঠে এসেছে গল্পে গল্পে। তাই আমি বলব, বইটি যতটা না যুবকদের তার চেয়েও বেশি মেয়েদের।
গল্পগুলো আশির দশকে আরবের তৎকালনি সমাজজীবনের প্রেক্ষাপটে লেখা। বইটি পড়তে গিয়ে পাঠক সেই সময়ের কিছুটা আভাস পাবেন। তখন বর্তমান যুগের মতো প্রযুক্তি এতটা বিস্তার লাভ করেনি। দাওয়াতের উপকরণ হিসেবে তিনি বারবার বলেছেন বয়ানের ক্যাসেটের কথা। তবে অনুবাদ করার সময় আমরা সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার্থে গল্পের আবহটাকে কিছুটা যুগোপযোগী করার চেষ্টা করেছি। যেমন সময় অপচয় করা প্রসঙ্গে আমরা ইন্টারনেটের কথা বলেছি, ইউটিউবের কথা বলেছি। বুঝতেই পারছেন আশির দশকে এসবের নাম-গন্ধও ছিল না।
আজ-জামানুল কাদিম-এ তিন খণ্ডে মোট ছত্রিশটি গল্প আছে। কিছু গল্প সাইজে বেশ ছোট হওয়ার কারণে এবং কিছু গল্পের মেসেজ আমাদের উদ্দিষ্ট পাঠকদের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হওয়ায় বাদ পড়েছে। প্রতি খণ্ড থেকে নয়টি করে মোট সাতাশটি গল্প আমরা মলাটবদ্ধ করেছি।
Rehmatullah Sojol –
শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম। জনপ্রিয় এই আরব দা’ঈ ও লেখক যা-ই লেখেন তা থেকেই যেনো মুক্তো ছড়ায়। শাইখের তুলনা শাইখ নিজেই। তাঁর অসম্ভব সুন্দর লেখনী পড়লে পাঠকের শুস্ক হৃদয় হয় স্নাত। পাঠক হৃদে স্পর্শ করে ঈমানের শীতল বাতাস।
‘আয-যামানুল কাদীম’ নামে তিন খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত গল্প-সংকলনটি আরববিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। সেই তিন খণ্ডের গল্প-সংকলনটির সেরা সেরা গল্পগুলো বাংলা ভাষায় মলাটবদ্ধ হয়েছে— ‘স্বাগত তোমায় আলোর ভুবনে’ নামে। বইটির ভাষান্তর করেছেন– আমীমুল ইহসান। প্রকাশ করেছে– রুহামা পাবলিকেশন।
• বইটির বিষয়বস্তু:
মূল বইটি যেহেতু তিন খণ্ডের তাই অনূদিত বইটিকেও করা হয়েছে তিন ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেকটা ভাগেই জায়গা পেয়েছে নয়টি করে ঈমান জাগানিয়া গল্প। সব মিলিয়ে বইটিতে রয়েছে মোট সাতাশটি গল্প। ছোটগল্পগুলো রচতি হয়েছে– মৃত্যু, গাফিলতি, সময়ের হিফাজত, পর্দা, উত্তম ব্যবহার ও তাওবাসহ মুমিন জীবনের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে।
• পাঠানুভূতি:
বইটিতে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে ঈমানদীপ্ত কতগুলো অসাধারণ গল্পের সমাহার ঘটেছে। প্রত্যেকটা গল্পই হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। প্রত্যেকটা গল্পেই পেয়েছি ভিন্ন রকম ঈমানী স্বাদ। প্রত্যেকটা গল্প যখনই পড়তাম তখনই মনে হতো, আমার গাফেল মনটাকে রবের সাথে পরিচয় দেওয়ার জন্যই হয়তো গল্পগুলোর অবতারণা। সাতাশটি গল্পের মধ্যে– সময়ের হিফাজত, মুসাফির ও ইদের জামা; এই তিনটি গল্প পড়ার সময় অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিলো মনের ভেতর। মনে হচ্ছিলো, গল্পগুলো যেনো আমার জন্যেই লেখা…
• মন্তব্য:
বইটির অনুবাদ এত্ত সুন্দর হয়েছে যা বলার বাহিরে। ভীন ভাষার কথাগুলোকে যে নিজ ভাষায় এত সুন্দর রুপ দেওয়া যায় সেটা এই বই না পড়লে বুঝতেই পারতাম না। পৃষ্ঠাসজ্জা ও বাঁধাইও বেশ চমৎকার ছিল।
• শেষ করছি বইতে থাকা প্রিয় দু’টি কথা দিয়ে–
১. আগামীকাল তাওবা করবে বলে বসে থেকো না। কারণ তুমি জানো না আগামীকালের সূর্যোদয় তুমি দেখবে কি না। বিভোর হয়ো না দীর্ঘ জীবনের প্রত্যাশায়। অনন্ত জীবনের পাথেয় আজই গুছিয়ে নাও। হতে পারে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন।
২. কবরের কাছে এসে সমান হয়ে যায় সবাই। কে রাজা কে প্রজা কোনো ফারাক নেই। সবার একই অবস্থা, একই পরিণতি। শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আর কত দৃষ্টান্ত চাই আমাদের?
_______________________
বই– স্বাগত তোমায় আলোর ভুবনে
লেখক– শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিম
অনুবাদক– আমীমুল ইহসান
প্রকাশনা– রুহামা পাবলিকেশন
পৃষ্ঠাসংখ্যা– ১৮০ পৃষ্ঠা
প্রচ্ছদ মূল্য– ২৪০ টাকা