সমাজের মানুষদের আরোপিত রীতি নীতি, কুসংস্কার আর কুপ্রথার হাজার বৃত্তের শৃঙ্খলে আমরা বন্দী। সমাজ কী বলবে, লোকে কী বলবে, সেই ভয়ে আর এই অন্ধকারের বলয় ভাঙা হয়ে উঠে না। তবুও স্রোতের বিপরীতে হাঁটা কিছু মানুষ এই বলয় ভাঙতে চেষ্টা করেন।
এই সমাজের মানুষের আরোপিত রীতি, প্রথা, কুসংস্কার, বিভিন্ন অসংগতি, পুঁজিবাদ, ভোগবাদিতা, ভারসাম্যহীনতা, অবিচার, ভিন্ন সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর গল্পের মাধ্যমে আঘাত হানা হয়েছে।
মানুষের জীবনের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-আনন্দ আর টানা-পোড়নের কাহিনীগুলো গদ্যশিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত।
প্রতিটি গল্প শেষে টীকা আকারে কুরআন আর হাদিসের কোটেশন গল্পগুলোকে শিক্ষণীয় করে তুলেছে। একেকটি গল্প একেক ধরনের বার্তা বহন করেছে।
প্রতিটি গল্প পড়া শেষে মনে দাগ কাটবে, নিজের ভিতরেও জেগে উঠবে বলয় ভাঙার প্রয়াস। ‘বলয় ভাঙার গল্প’ এই গল্পগ্রন্থ পড়ার মাধ্যমে আপনিও এই বন্দী বলয় ভেঙে বেরিয়ে একজন আলোকিত মানুষ হতে পারেন।
রবিউল ইসলাম –
বর্তমানে ছোট গল্প বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কারণ এখানে গল্পের মাঝেই মিশে থাকে শিক্ষা। তারই আলোকে শিক্ষনীয় মেসেজের সমাহার সমৃদ্ধ একঝাক গল্প নিয়ে সাজানো অন্যতম বই হলো “বলয় ভাঙার গল্প”।
.
সার-সংক্ষেপঃ-
“বলয় ভাঙার গল্প” বইটি লেখিকা উম্মে সুমনা বুশরা ২৯টি ছোটগল্পের মাধ্যমে সাজিয়েছেন। গল্পের মাধ্যমে তিনি সামাজিক সমস্যা, কুপ্রথা, কুসংস্কার ইত্যাদির মর্মমূলে আঘাত হেনেছেন। তুলে আনতে চেষ্টা করেছেন এসবের বিপরীতে ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনা।
প্রথম গল্প “দুই মেরুর দুই বাবা” শিরোনামে লেখিকা দেখিয়েছেন একজন বাবা কারো জন্য নির্ভরতার প্রতীক আবার কারো জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন।
“ঘর ভাঙানিয়া মানুষেরা” শিরোনামের গল্পে উঠে এসেছে বর্তমানে স্বামী স্ত্রীর ভাঙনময় সংসারের কথা। সামান্য কারনেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ডিভোর্স হয়ে যাওয়া এখন যেন একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা।
বইয়ের একটি অন্যতম গল্প হলো “প্রথা ভাঙার বিয়ে”। এখানে দেখানো হয়েছে সুন্নত তরিকায় বিয়ে হওয়া পরিবারটি দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখে রয়েছে। পক্ষান্তরে আধুনিক প্রথায় বিয়ে হওয়া পরিবারটির দাম্পত্য জীবনের ভাঙন।
এছাড়াও বইতে রয়েছে দু:খবিলাসী, ছেলেপক্ষ বনাম মেয়েপক্ষ, যৌতুকের কৌতুক, স্বাদ, রত্নগর্ভা, সখী ভালোবাসা কারে কয়, প্রথা ভাঙবেই, সায়িমের সিয়াম উদযাপন ইত্যাদি শিরোনামের দূর্দান্ত সব গল্প।
.
ব্যক্তিগত অনূভুতিঃ-
বইটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। এর প্রত্যেকটি গল্পই যেন আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ভিন্ন মাত্রার স্বাদে ভরপুর। লেখিকা পাঠককে গল্পের শেষ টুইস্টের জন্য অপেক্ষায় রাখেন নি। বরং গল্পটি পড়ে আমরা বাস্তব জীবনে কি শিক্ষা পাবো সে সম্পর্কে আলোচনার দিকে বেশি জোর দিয়েছেন। যার প্রতিটি গল্পই যেন ছড়িয়ে দেয় শান্তির বার্তা।