সকালবেলা একটা ছেলে এসেছে আমার কাছে একটা দুয়া জানতে। আজকের এই বিশেষ দিন আখেরি চাহার সোম্বাতে গোসলের বিশেষ দুয়া। আমি এ সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করলে ছেলেটা কিছুটা মর্মাহত হলো। কারণ, তার আত্মীয় বিদেশ থেকে ফোন করে বলেছে, তার স্ত্রীকে এই দুয়া লিখে দিতে। এর বিনিময়ে সে যা হাদিয়া চায় সে দেবে।
আরবিতে একটা প্রবাদ আছে ‘আল ইনসানু হারিসুন ফী মা মুনি’আ’। মানুষ সেই জিনিষের প্রতি আকৃষ্ট থাকে যা থেকে তাকে নিষেধ করা হয়। এই আকর্ষণের মূল সূত্র হলো শয়তানের প্ররোচনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আকর্ষণটা আসলে নিষিদ্ধ জিনিষটির মধ্যে নয়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের মধ্যে।
আল্লাহর সুস্পষ্ট ফরজ হুকুম লঙ্ঘন করে যায় প্রতিনিয়ত— স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে। আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহর নাম-গন্ধ নেই জীবনে, কিন্তু নানা বিদ’আতি অনুষ্ঠান পালনে অদম্য উৎসাহ। ধর্মের মৌলিক বিধি-বিধানের প্রতি চরম অবজ্ঞা, অথচ মনগড়া সব আয়োজনে অগ্রণী।

আজকের দিনটির আরেকটি নাম শোনা যাচ্ছে লোকমুখে—আখেরি চাহার সোম্বাহ। চাহার সোম্বাহ একটি ফার্সি শব্দ, এর অর্থ ‘বুধবার’; আর আখেরি মানে ‘শেষ’। শেষ বুধবার।
রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হন তখন বেশ অনেক দিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন। এর মধ্যে শেষ বুধবারে তিনি আকস্মিক অনেকটা সুস্থ্য বোধ করেন। একারণে তিনি সেদিন গোসল করেন। সাহাবিরা তাঁর সুস্থতা দেখে খুবই আনন্দিত হন এবং মাদিনাতে বেশ আনন্দের একটা জোয়ার বয়ে যায়। কেউ কেউ খুশিতে দাস মুক্ত করে দেন, কেউ বা দান সাদাকা করেন সামর্থ্য মতো।
আল্লাহর রাসূলের গোসল যেমন ছিল একটি স্বাভাবিক ব্যাপার, তেমনি তাঁর সুস্থতার প্রেক্ষিতে সাহাবিদের আনন্দ প্রকাশও ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এটা ছিল কেবল সেই দিনের একটা ব্যাপার। এটা প্রতি বছর পালনের কোনো বিষয় ছিল না। এটা কোনো ইবাদাত-বন্দেগির সাথেও সম্পৃক্ত নয়।
ইসলামী শারীয়াতে এ দিনের বিশেষ কোনো মর্যাদা কিংবা বিশেষ কোনো আনুষ্ঠানিক ‘ইবাদাতের নির্দেশনা নেই। কিন্তু ইসলামে না থাকলেও এক শ্রেণির মানুষ এই দিনকে একটি বিশেষ দিনে পরিণত করেছে। বিশেষ কিছু ‘ইবাদাত নির্ধারণ করে নিয়েছে। বিশেষ দুয়া ও বিশেষ গোসল সহযোগে বিশেষ দান-সাদাকা।
আমাদের পত্র-পত্রিকাগুলো জানে যে এগুলো করে ধর্মের নামে ধর্মের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা যায়। তাই এ ধরণের বিদ’আতী অনুষ্ঠানগুলোর প্রচারণায় বিশেষ ভূমিকা রেখে অশেষ নেকি হাসিলে তারা পিছ-পা হয় না।
সাহাবি-তাবিঈন, তাবিউত তাবি’ঈন, আইম্মাহ মুজতাহিদিন কেউ কখনও এমন কোনো দিবস পালন করেননি। অতএব আমাদেরও সকলের উচিৎ ধর্মের নামে প্রচলিত এসব অধর্মের ব্যাপারে নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করে তোলা।
© আবু তাসমিয়া আহমদ রফিক
সিয়ান পাবলিকেশন
বিশুদ্ধ জ্ঞান〢বিশ্বমান